সহকর্মী হিসেবে যে দক্ষতা ও যোগ্যতা আপনার থাকা চাই

অফিসে একজন ভালো সহকর্মী পাওয়া নিশ্চতভাবে একটি সৌভাগ্যের বিষয়! তেমনি নিজে একজন আদর্শ সহকর্মী হওয়া বা হওয়ার চেষ্টা করা আরও বড় ব্যাপার। অনেকেই ভাবেন সহকর্মীদের সাথে ভালো ব্যবহার করলেই কাজ শেষ! কিন্তু শুধু ভদ্রতা বা হাসিমুখ যথেষ্ট নয়! একজন ভালো সহকর্মী হওয়ার জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা ও দক্ষতা। প্রতিযোগিতামূলক এই কর্মজগতে একজন ভালো সহকর্মীর যোগ্যতা ও দক্ষতা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। আর এই দক্ষতা আর যোগ্যতা নিয়ে আপনাকে হতে হবে সহযোগিতাপূর্ণ, দায়িত্ববান এবং ইতিবাচক মানসিকতার অধিকারী।

এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো, সহকর্মী হিসেবে যে দক্ষতা ও যোগ্যতা আপনার থাকা চাই। কীভাবে আপনি একজন আদর্শ কলিগ হয়ে উঠতে পারেন এবং আপনার কর্মস্থলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেন।

ব্লগে যা থাকছে-

সহকর্মীদের সাথে ভালো আচরণই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন কিছু দক্ষতার!

একটা সাধারণ ভুল ধারণা হলো, অফিসে কারো সাথে হাসিমুখে কথা বললেই আপনি ভালো সহকর্মী হয়ে গেলেন। বাস্তবে বিষয়টি আরেকটু জটিল। একজন অফিস কলিগ (office colleague) হিসেবে আপনার কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ, সহযোগিতা করার মনোভাব, সময়নিষ্ঠতা এবং যোগাযোগ দক্ষতাই প্রমাণ করে আপনি আসলেই একজন ভালো সহকর্মী কিনা।

শুধু নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা নয়, দলের সদস্যদের পাশে দাঁড়ানো, চাপের মুহূর্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া এবং প্রয়োজনের সময় কাউকে বোঝার মানসিকতা রাখাটাই একজন আদর্শ সহকর্মী পরিচয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক, একজন ভালো সহকর্মী হয়ে ওঠার জন্য কী কী যোগ্যতা ও দক্ষতা আপনার থাকা দরকার।

কী কী দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে ভালো সহকর্মী হয়ে উঠবেন?

একটি কর্মক্ষেত্র সফল তখনই হয় যখন সবাই একে অপরের সাথে সুন্দরভাবে কাজ করতে পারে। শুধু ভালো আচরণ করাই যথেষ্ট নয়, একজন ভালো সহকর্মীর যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকাও জরুরি। সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, দলগত কাজে অবদান রাখা এবং পেশাদারিত্ব বজায় রাখা, এসবই একজন আদর্শ সহকর্মীর বৈশিষ্ট্য।

১. যোগাযোগ দক্ষতা (Communication Skill)

ভালো সহকর্মীর যোগ্যতা হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্পষ্ট ও বিনয়ীভাবে নিজের কথা বলার এবং অন্যের কথা শোনার ক্ষমতা। অন্যের মতামতের গুরুত্ব দেয়া। অফিসে যা যা করবেন-

  • ইমেইল বা মেসেজে পরিষ্কারভাবে তথ্য দিন
  • মিটিংয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে মত প্রকাশ করুন
  • সহকর্মীদের ফিডব্যাক গ্রহণ করুন ও নিজেরটা প্রকাশ করুন
  • অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন

কমিউনিকেশন গ্যাপ (Communication gap) অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝির জন্ম দেয়, যা পুরো টিমকে প্রভাবিত করে। তাই যোগাযোগ দক্ষতা দিকে নজর দিন প্রথমেই।

২. সহযোগিতা করা ও দলীয় মনোভাব (Team Spirit & Cooperation)

আপনি যদি শুধুমাত্র নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তবে আপনি টিমের সদস্য হলেও প্রকৃত অর্থে টিম প্লেয়ার নন। মনে রাখতে হবে, একা কাজ করার চেয়ে সবাই মিলে কাজ করা সহজ। ভালো সহকর্মীর যোগ্যতা হলো-

  • টিম মেম্বারদের পাশে দাঁড়ানো
  • সময়মতো সাহায্যের হাত বাড়ানো
  • কাজ ভাগ করে নেওয়ার মানসিকতা রাখা

অফিসের অনেক জটিল কাজ শুধুমাত্র টিমওয়ার্কের মাধ্যমেই সহজ হয়ে ওঠে। এখানে একা কাজ করার কোন আলাদা বাহাদুরি দেখাবেন না।

৩. সময়নিষ্ঠ থাকা জরুরি (Punctuality)

সহকর্মী হিসেবে সময়নিষ্ঠতা শুধু আপনাকে পেশাদার করে তোলে না, বরং এতে করে সহকর্মীদের কাজের ছন্দও বজায় রাখতে সাহায্য করে। যা করবেন-

  • সময়মতো অফিসে আসা
  • ডেডলাইনের আগে কাজ জমা দেয়া
  • মিটিংয়ে দেরি না করা
  • সময়মতো অফিস শেষ করা, অযথা বেশি সময় অফিসে থাকবেন না

এই ছোট ছোট বিষয়গুলোই আপনাকে একজন আদর্শ সহকর্মী হিসেবে আলাদা করবে।

৪. নেতৃত্ব গুণ (Leadership Qualities)

সব সময় বড় পদে থেকেই নেতৃত্ব দিতে হয় না। আপনি যে পদেই থাকুন না কেন, প্রয়োজনে টিমকে গাইড করার ক্ষমতা থাকা উচিত। আপনার এই দক্ষতা থাকলে দেখবেন সুযোগও তৈরি হয়ে গেছে! ভালো সহকর্মীর যোগ্যতা হিসেবে নেতৃত্ব মানে হলো-

  • ঝামেলা মেটানোর চেষ্টা করা
  • নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে অন্যদের সাহায্য করা
  • মোরাল বুস্ট করা
  • পজেটিভ মানসিকতা দেখানো 

৫. ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স (Emotional Intelligence)

অফেসে নিজের সহকর্মীদের আবেগ ও বিশেষ পরিস্থিতি বুঝে চলা একজন সহকর্মীর অন্যতম বড় গুণ। যা করবেন- 

  • কারো মুড খারাপ থাকলে সেটা বুঝে সহযোগিতা করা বা চুপ থাকা
  • রাগ বা বিরক্তি পেশাগত আচরণে না আনার চেষ্টা করবেন
  • সহানুভূতিশীল আচরণ করুন

এগুলো একজন ভালো সহকর্মীর যোগ্যতা হিসাবে আপনাকে বিশেষ করে তুলবে। অন্যেরাও আপনাকে ভালো ভাবে ট্রিট করবে এবং বুঝবে।

৬. সমালোচনাকে গ্রহণ করার মানসিকতা

কাজের মধ্যে ভুল হবেই। কিন্তু সেই ভুলকে স্বীকার করে তা থেকে শেখাই পেশাদারিত্ব। সীমাবদ্ধতা সবার আছে ও থাকবে, এটা মেনে নিয়েই কাজ করুন। ভালো সহকর্মী হওয়া মানে-

  • গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ করা
  • প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ফিডব্যাক গ্রহণ করা
  • নিজের ভুল স্বীকার করে সংশোধন করার চেষ্টা করুন

৭. আত্মবিশ্বাস এবং নম্রতা—দুটোই থাকা জরুরি

যে সহকর্মী নিজের কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী এবং একই সঙ্গে নম্র, তার প্রতি অন্যরা স্বাভাবিকভাবেই শ্রদ্ধাশীল হয়। আত্মবিশ্বাস যেন অহংকারের কারণ না হয়! যা করবেন-

  • আত্মবিশ্বাস দিয়ে অন্যকে অনুপ্রাণিত করুন
  • আত্মবিশ্বাস ও নম্রতা দিয়ে টিমে একতা বজায় রাখুন

ভালো সহকর্মীর যোগ্যতা এই দুটি বৈশিষ্ট্যের ভারসাম্যে প্রমাণিত হয়।

৮. টেকনোলজি ব্যবহারে পারদর্শিতা

আজকের যুগে একজন সহকর্মী হিসেবে ডিজিটাল টুলস ও বিভিন্ন সফটওয়্যার নিয়ে ন্যূনতম জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এটা সময়ের অন্যতম প্রধান চাহিদা। সকল পেশাদার মানুষের টেকনোলজি ব্যবহারের নূন্যতম পারদর্শিতা থাকা চাই।

  • ইমেইল, মেসেজিং ও চ্যাট কমিউনিকেশন
  • প্রেজেন্টেশন টুলস
  • প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ
  • ক্লাউড ফাইল শেয়ারিং
  • বাংলা ও ইংরেজি টাইপিং

আপনি যদি এইসব ক্ষেত্রে অন্যদের সাহায্য করতে পারেন, তবে আপনি একজন আদর্শ সহকর্মী।

৯. বিশ্বাসযোগ্যতা (Trustworthiness)

যে সহকর্মীর কথা ও কাজে মিল থাকে, যার কাছে তথ্য গোপন রাখা যায়, তাকে সবাই বিশ্বাস করে। যা করবেন-

  • অফিস সিক্রেট না ফাঁস করা
  • কারও ব্যক্তিগত তথ্য অপরকে না বলা
  • সহকর্মীর সমস্যা অন্যের সামনে না বলা
  • মিথ্যা না বলা

মনে রাখবেন, বিশ্বাস একজন মানুষের সবচেয়ে বড় মূলধন। এটা হারালে আর ফিরে আসবে না।

১০. ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি (Positive Attitude)

চাপের মধ্যে পড়েও যিনি হাসিমুখে কাজ করেন, তিনিই ভালো সহকর্মীর যোগ্যতা রাখেন।

  • নেতিবাচক কথা না বলা
  • “সমস্যা নয়, সমাধান” – এই মনোভাব রাখা
  • অন্যদের উৎসাহ দেওয়া

এমন ইতিবাচক মনোভাব দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

কলিগ বা সহকর্মী হিসেবে আপনি কেমন?

এবার এই প্রশ্নগুলো নিজেকেই নিজে জিজ্ঞেস করুন।

  • আপনি কি অন্যদের কাজেও সাহায্য করেন?
  • আপনি কি সময়মতো কাজ শেষ করেন?
  • আপনার সহকর্মীরা কি আপনাকে নিয়ে স্বস্তি বোধ করে?
  • কেউ কি দুঃসময়ে আপনার পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেন?

যদি উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে আপনি হয়তো ইতিমধ্যে একজন ভালো সহকর্মী।

আর যদি ‘না’ হয়, তাহলে সময় এসেছে নিজেকে একটু পরিবর্তন করার। উপরের ভালো সহকর্মীর যোগ্যতা ও দক্ষতা থেকে কিছু কাজে লাগান। 

একজন ভালো সহকর্মী মানে পুরো অফিসের উন্নয়ন

একটা টিম তখনই সফল হয়, যখন সেই টিমে প্রত্যেক সদস্যই দায়িত্বশীল ও সহযোগিতাপরায়ণ। একজন ভালো সহকর্মী হিসেবে আপনার আচরণ, যোগ্যতা ও দক্ষতা কেবল আপনার ক্যারিয়ার নয়, পুরো অফিসের পরিবেশকেও উন্নত করে।

এই ব্লগে উল্লেখিত ১০টি গুণ বা ভালো সহকর্মীর যোগ্যতা যদি আপনি নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে পারেন, তাহলে আপনি শুধু অফিসের নয়, পুরো সমাজের একজন মূল্যবান সদস্য হয়ে উঠবেন! সহকর্মী হিসেবে আপনার উপস্থিতি যেন অন্যের অনুপ্রেরণা হয়, এই হোক আপনার পেশাগত লক্ষ্য।

আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সহজ ও সাশ্রয়ী সমাধান- হাজিরা

হাজিরা দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী এমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট অ্যাপগুলোর একটি। একটি অ্যাপ থেকেই আপনি পেতে পারেন কর্মী ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন সাপোর্ট। যেমন-

  • দৈনিক হাজিরা
  • কর্মী তথ্যভাণ্ডার
  • কাজের শিফট প্লানিং
  • রিপোর্ট
  • পে-রোল ম্যানেজমেন্ট
  • ডিজিটাল চুক্তিপত্র
  • ডকুমেন্ট ভল্ট
  • কাস্টম সেটিংস
  • ফ্রি কাস্টমার সাপোর্ট

কেনো সাশ্রয়ী অ্যাপ বলছি সেটা জানতে দেখুন-  হাজিরা’র বিভিন্ন প্যাকেজ ও মূল্য

সহজ তিনটি ধাপে হাজিরা’তে যাত্রা শুরু করুন!

১ম ধাপ- হাজিরা’তে রেজিস্ট্রেশন বা সাইন আপ করুন: 

প্রথমেই কোম্পানির মালিক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করে হাজিরা’য় আপনার জার্নি শুরু করুন। রেজিস্ট্রেশনের পরেই আপনার ইনবক্সে একটি ভেরিফিকেশন মেইল যাবে, এটি দিয়ে আপনার ই-মেইলটি ভেরিফাই করতে হবে। 

(ভেরিফিকেশন মেইলটি আপনার ইনবক্সে না পাওয়া গেলে অনুগ্রহ করে স্প্যাম ফোল্ডারে চেক করুন।)

২য় ধাপ- আপনার কোম্পানি সেট-আপ করুন: 

ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে লগইন করুন। এবার আপনার কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে হাজিরা’য় আপনার কোম্পানি সেট-আপ করুন।

৩য় ধাপ- হাজিরা’র বিভিন্ন ফিচার উপভোগ করুন: 

এরপর আপনি হাজিরা’র ড্যাশবোর্ডটি দেখতে পাবেন। হাজিরা’র বিভিন্ন ফিচার উপভোগ করুন সহজে এবং সাশ্রয়ী দামে! হাজিরা’র ওয়েব এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, দুটোই আছে। 

ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন: আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কাজগুলো সম্পাদন করার জন্য ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে হবে।
হাজিরা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন: হাজিরা’র মোবাইল অ্যাপ আপনার প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজগুলো পরিচালনা করা আরও সহজ করবে। এমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট আরও সহজ করতে ডাউনলোড করুন হাজিরা’র মোবাইল অ্যাপ- 

অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ

আইওএস অ্যাপ 

হাজিরা অ্যাপের সকল কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ডেমো ভিডিও দেখুন-
Demo of Hazira- Employee Management Application
৩০ দিনের ফ্রি ট্রায়াল!

হাজিরা’য় আপনি চাইলেই প্রথম ৩০ দিন ফ্রি ট্রায়াল শুরু করতে পারেন। তারপর প্রয়োজন মতো আপনার ব্যবসার জন্য প্যাকেজ নিয়ে ব্যবসায় সফলতা অর্জন করুন। তাহলে আর দেরি না করে চলে আসুন হাজিরা’য়!

সহকর্মীদের সাথে আচরণ কেমন হওয়া উচিত?

একজন প্রফেশনাল এমপ্লয়ি বা পেশাদার কর্মী হিসেবে আপনার জ্ঞান ও দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ, তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সহকর্মীদের সাথে আচরণ। একজন আদর্শ সহকর্মী হতে গেলে শুধু পেশাদারিত্বই নয়, বরং মানবিক কিছু গুণাবলিও থাকা প্রয়োজন। আপনার কাজের মান ও পেশাগত সাফল্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিদিন আপনি যাদের সাথে কাজ করেন তাদের সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্কটাও কিন্তু সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। একটা সুন্দর কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে হলে শুধু কাজ জানা যথেষ্ট নয়! ভদ্রতা, শ্রদ্ধা ও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবও প্রয়োজন।

কর্পোরেট জগতে অফিস কলিগ, সহকর্মী কিংবা Coworker, যে নামেই ডাকুন না কেন, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা আপনার ক্যারিয়ার উন্নয়নের জন্য জরুরি। আজকের এই ব্লগে আমরা জানব, সহকর্মীদের সাথে আচরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ, কীভাবে তা আরও ভালো করা যায় এবং আপনি নিজেই কি একজন আদর্শ সহকর্মী হয়ে উঠতে পারছেন কিনা।

ব্লগে যা থাকছে-

কর্মস্থলের ধরন অনুযায়ী অফিস কলিগদের ভিন্নতা

সব অফিস একরকম হয় না, আর এই ভিন্নতার উপর নির্ভর করে অফিস সহকর্মীদের ধরণেও পার্থক্য থাকে। বিভিন্ন ধরনের অফিস এবং সেসব অফিসে সহকর্মীদের ধরন সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থাকাটা জরুরি।

১. কর্পোরেট অফিস

এখানে সহকর্মীরা বেশিরভাগ সময় টিমভিত্তিক বা দলগতভাবে কাজ করে। তাই পারস্পরিক সমঝোতা, পেশাদারিত্ব এবং পরস্পরের দক্ষতাকে সম্মান করার মনোভাবটা জরুরি। এটা না থাকলে কর্মপরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়।

২. স্টার্টআপ অফিস

স্টার্টআপে সহকর্মীরা অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়। কাজের পরিধি বড় হলেও সবার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। এখানে অপেশাদার (informal) আচরণ বেশি দেখা যায়।

৩. সরকারি অফিস

এখানে হায়ারার্কি বা পদবিভিত্তিক যোগাযোগ রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সকল অফিসে বয়োজ্যেষ্ঠ এবং অভিজ্ঞ সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো খুব জরুরি।

৪. এনজিও/ফিল্ড বেসড অফিস

এখানে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি। এই সব কর্মস্থলে সহানুভূতিশীল ও সহায়তাপূর্ণ আচরণ প্রত্যাশিত। 

৫. ভার্চুয়াল অফিস/রিমোট ওয়ার্ক

অনলাইন অফিসে সহকর্মীদের দেখা না গেলেও, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা, ইমেইল ও মেসেজে সময়মতো যোগাযোগ রাখতে হয়। এখানে কর্মীরা অনেক বেশি ক্যাজুয়াল হবার সুযোগ পান না।

৬. প্রোডাকশন হাউজ বা কারখানা

এখানে টিমওয়ার্ক সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। এই সকল কর্মস্থলে সহকর্মীদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার দিকে নজর রাখা উচিত। এই ধরনের কর্মস্থলে সহকর্মীরা একে অপরের অনেক সাহায্য যেমন করেন, তেমনি তাদের মধ্যে বিবাদ ও বৈপরিত্য অনেক বেশি দেখা যায়। 

প্রতিটি অফিসের ধরন অনুযায়ী অফিস কলিগদের সাথে আচরণের ধরনও ভিন্ন হতে পারে, তবে সব জায়গাতেই শ্রদ্ধাবোধ ও পেশাদারিত্ব অপরিহার্য।

সহকর্মীদের সাথে আচরণ কেমন হওয়া উচিত?

সম্মান, সহযোগিতা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে একটি সুন্দর কর্মপরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। একজন আদর্শ অফিস কলিগ হতে চাইলে ইতিবাচক মনোভাব ও দায়িত্ববোধ থাকা আবশ্যক। মনে রাখবেন, ভালো সহকর্মীরাই একটি টিমকে সফলতার দিকে নিয়ে যায়।

১. যেকোন পরিস্থিতিতে পেশাদার আচরণ বজায় রাখুন

অফিসে আপনাকে অবশ্যই একটি পেশাদার আচরণ বজায় রাখতে হবে। এতে আপনার সহকর্মীরা আপনার প্রতি আস্থা পান। আর এই আস্থাই একসময় শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করে। একজন ভালো অফিস কলিগ (office colleague) কখনোই গসিপ, গুজব বা নেতিবাচক কথাবার্তায় জড়ান না।

২. অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সৌজন্য দেখান

সহকর্মী যেই পদেই থাকুক না কেন, তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করতে হবে। আপনি যদি একটি টিমে কাজ করেন, তাহলে একজন কো-ওয়ার্কার (co-worker)-এর ছোট বা বড় অবদানকে মূল্য দিন। বেশি বেশি ধন্যবাদ, প্লিজ, দয়া করে, সরি, ক্ষমা করবেন ইত্যাদি কথাগুলো ব্যবহার করুন।

৩. সময়নিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল হতে হবে

আপনার কাজ সময়মতো শেষ করলে অন্যদের কাজও বাধাগ্রস্ত হবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে। দায়িত্বশীল আচরণ দেখিয়ে আপনি সহকর্মীদের আস্থা অর্জন করতে পারেন।

৪. সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকুন

একজন আদর্শ সহকর্মী শুধু নিজের কাজ নয়, অন্যের কাজেও প্রয়োজনে সহায়তা করেন। সময় থাকলে টিমমেটদের কাজের বোঝা কমান। এটি অফিসের পরিবেশে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলে।

৫. পরচর্চা, পরনিন্দা ও গসিপ এড়িয়ে চলুন

অফিসে পরচর্চা, নেতিবাচক মন্তব্য এবং কারও ব্যর্থতা নিয়ে উপহাস করা যাবে না। সহকর্মীদের সাথে আচরণ এর সবচেয়ে ভুল ও ভয়ংকর দিক এটি। এটি শুধু পরিবেশকে বিষিয়ে তোলে না, বরং আপনার নিজের ইমেজও নষ্ট করে।

৬. কার্যকর ও সহজে যোগাযোগ রক্ষা করুন

ইমেইল হোক বা সরাসরি কথা, আপনার সহকর্মীর সাথে আচরণ হোক সদয় ও সম্মানজনক। সময়মতো রিপ্লাই দিন, দরকারি তথ্য সঠিকভাবে শেয়ার করুন। অযথা কোন বিষয়ে কার্পণ্য না করে উদারতা দেখাবেন। এখন তো অফিস টাইম শেষ কাল মেইল দিবো, আমাকে মেইল করা হয়নি তাই ফাইল দেইনি, ইত্যাদি ধরনের জটিলতা না দেখিয়ে সহজ যোগাযোগ রক্ষা করুন।

৭. মতামত ও চিন্তার বৈচিত্র্যকে ভয় পাবেন না

সব অফিস সহকর্মী আপনার মত চিন্তা করবে না এবং সেটি স্বাভাবিক। ভিন্নমত থাকলেও অন্যের ভাবনা ও সংস্কৃতিকে সম্মান করতে শিখুন। আরেক জনের চিন্তা আপনার কাছে অদ্ভুত মনে হলে, আপনার চিন্তাও কারও কাছে অদ্ভুত মনে হয়!

৮. পারসোনাল স্পেস বা ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন

সহকর্মীদের ব্যক্তিগত জীবন বা ইমোশন নিয়ে প্রশ্ন করা বা মন্তব্য করা এড়িয়ে চলুন। বন্ধুত্বপূর্ণ হলেও পেশাদার সীমা বজায় রাখুন। অনেক সময় আমরা ভুলে যাই আমাদের অফিসের বাহিরেও একটা জীবন আছে। যেখানে হয়তো একেক জন একেক ধরনের বাস্তবতার সাথে লড়াই করছে। তাই ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন।

৯. সহকর্মীর কৃতিত্ব স্বীকার করুন

অফিসে আপনি যদি অন্যের সহায়তায় কোনো সফলতা পান, সেটি তাদের কৃতিত্ব হিসেবে প্রকাশ করুন। এখানে কোন কার্পণ্য করবেন না। এটি সহকর্মীদের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করে। এতে করে আপনি ভবিষ্যতে আরও সাহায্য পেতে পারেন।

১০. নেতিবাচক পরিস্থিতি বা বিবাদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন

কোনো সমস্যা হলে সরাসরি অথরিটির বা মেনেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করুন। সহকর্মীর সঙ্গে যুক্তি-তর্কে না গিয়ে শান্তভাবে সমাধান খুঁজুন। বিবাদ এড়ানো না গেলেও নিজের অবস্থান নষ্ট করবেন না। 

এবার ভাবুন, আপনি কি একজন আদর্শ সহকর্মী?

একজন আদর্শ সহকর্মী শুধু কাজ করেন না, বরং অন্যদের কাজ সহজ করতে সহায়তা করেন। তার আচরণে থাকে পেশাদারিত্ব, শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও ইতিবাচক মনোভাব।

এবার নিচের প্রশ্নগুলো নিজেকে করুন-

  • আমি কি অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি?
  • আমি কি কারও সফলতায় ঈর্ষা না করে আনন্দিত হই?
  • আমি কি সময়মতো দায়িত্ব পালন করি?
  • আমি কি গসিপ ও পরচর্চা থেকে নিজেকে দূরে রাখি?
  • আমি কি আমার ভুল স্বীকার করি এবং তা সংশোধন করতে আগ্রহী?

যদি সব প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তবে আপনি নিঃসন্দেহে একজন আদর্শ সহকর্মী।

সহকর্মীদের সাথে আচরণ ও যোগাযোগে প্রযুক্তির ভূমিকা

বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর সময়ে এমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার সহকর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে দারুণ ভূমিকা রাখছে। একটি আধুনিক এমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার কর্মীদের জন্য যা করতে পারে-

  • ইমপ্লয়িদের কাজ ও দায়িত্ব স্পষ্ট করে
  • ছুটি ও অনুপস্থিতি সম্পর্কিত তথ্য সহজে জানিয়ে দেয়
  • কর্মীদের মধ্যে স্বচ্ছ যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করে
  • পারফরম্যান্স ট্র্যাক করে এবং কৃতিত্ব প্রদান করে
  • জন্মদিন, ওয়ার্ক এনিভার্সারি ইত্যাদি ইভেন্ট উৎযাপন সহজ করে

এভাবে একটি সফটওয়্যার অফিসের কলিগদের মধ্যে স্বচ্ছতা এবং পেশাদারিত্ব গড়ে তোলে। কর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি কমে এবং কাজের গতি বাড়ে।

সহকর্মীদের সাথে আচরণ পেশাদার জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। শুধু দক্ষ কর্মী হওয়া যথেষ্ট নয়, বরং আপনি অফিস সহকর্মীদের সাথে কেমন আচরণ করছেন, সেটিই দীর্ঘমেয়াদে সফলতা নির্ধারণ করে। পেশাদারিত্ব, শ্রদ্ধাবোধ, সহানুভূতি ও সহযোগিতা- এই চারটি গুণ একজন আদর্শ সহকর্মী তৈরি করে। মনে রাখবেন, আপনার আচরণই অন্যদেরকে প্রভাবিত করে এবং কর্মস্থলকে সুন্দর করে তোলে।

আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সহজ ও সাশ্রয়ী সমাধান- হাজিরা

হাজিরা দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী এমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট অ্যাপগুলোর একটি। একটি অ্যাপ থেকেই আপনি পেতে পারেন কর্মী ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন সাপোর্ট। যেমন-

  • দৈনিক হাজিরা
  • কর্মী তথ্যভাণ্ডার
  • কাজের শিফট প্লানিং
  • রিপোর্ট
  • পে-রোল ম্যানেজমেন্ট
  • ডিজিটাল চুক্তিপত্র
  • ডকুমেন্ট ভল্ট
  • কাস্টম সেটিংস
  • ফ্রি কাস্টমার সাপোর্ট

কেনো সাশ্রয়ী অ্যাপ বলছি সেটা জানতে দেখুন-  হাজিরা’র বিভিন্ন প্যাকেজ ও মূল্য

সহজ তিনটি ধাপে হাজিরা’তে যাত্রা শুরু করুন!

১ম ধাপ- হাজিরা’তে রেজিস্ট্রেশন বা সাইন আপ করুন: 

প্রথমেই কোম্পানির মালিক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করে হাজিরা’য় আপনার জার্নি শুরু করুন। রেজিস্ট্রেশনের পরেই আপনার ইনবক্সে একটি ভেরিফিকেশন মেইল যাবে, এটি দিয়ে আপনার ই-মেইলটি ভেরিফাই করতে হবে। 

(ভেরিফিকেশন মেইলটি আপনার ইনবক্সে না পাওয়া গেলে অনুগ্রহ করে স্প্যাম ফোল্ডারে চেক করুন।)

২য় ধাপ- আপনার কোম্পানি সেট-আপ করুন: 

ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে লগইন করুন। এবার আপনার কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে হাজিরা’য় আপনার কোম্পানি সেট-আপ করুন।

৩য় ধাপ- হাজিরা’র বিভিন্ন ফিচার উপভোগ করুন: 

এরপর আপনি হাজিরা’র ড্যাশবোর্ডটি দেখতে পাবেন। হাজিরা’র বিভিন্ন ফিচার উপভোগ করুন সহজে এবং সাশ্রয়ী দামে! হাজিরা’র ওয়েব এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, দুটোই আছে। 

ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন: আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কাজগুলো সম্পাদন করার জন্য ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে হবে।
হাজিরা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন: হাজিরা’র মোবাইল অ্যাপ আপনার প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজগুলো পরিচালনা করা আরও সহজ করবে। এমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট আরও সহজ করতে ডাউনলোড করুন হাজিরা’র মোবাইল অ্যাপ- 

অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ

আইওএস অ্যাপ 

হাজিরা অ্যাপের সকল কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ডেমো ভিডিও দেখুন-
Demo of Hazira- Employee Management Application
৩০ দিনের ফ্রি ট্রায়াল!

হাজিরা’য় আপনি চাইলেই প্রথম ৩০ দিন ফ্রি ট্রায়াল শুরু করতে পারেন। তারপর প্রয়োজন মতো আপনার ব্যবসার জন্য প্যাকেজ নিয়ে ব্যবসায় সফলতা অর্জন করুন। তাহলে আর দেরি না করে চলে আসুন হাজিরা’য়!